Search
Close this search box.

হিজাব: মহান আল্লাহর নির্দেশ

ইসলামি শরীয়তে নারীর মর্যাদা ও পোশাকের গুরুত্ব তুলে ধরে বলা হয়েছে, পর্দার আদেশ নারীর ইজ্জত, পবিত্রতা ও সৌন্দর্য রক্ষার জন্য। হিজাব নারীর আত্মসম্ভ্রম এবং পুরুষের জন্যও সম্মানের। কোরান ও হাদিসের উদ্ধৃতিতে বলা হয়েছে, নারীর সৌন্দর্য গোপন রাখা হলে সমাজে ফিতনা কমে, এবং মুমিন নারীদের পর্দার নির্দেশ পালনে ...

❑ ভূমিকা:

ইসলামি শরীয়তে নারীর প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ শরীয়ত নারীর ইজ্জত-আব্রু হেফাজতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বকে সমুন্নত ও সুউচ্চ করেছে। নারীর পোশাক এবং সৌন্দর্যের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শর্তারোপ করা হয়েছে তা শুধু তাকে সংরক্ষণ করার জন্যই, সৌন্দর্যের প্রকাশের মাধ্যমে যে বিপর্যয় সৃষ্টি হবে তার সকল পথ বন্ধ করার জন্য। এটা নারীর স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করা নয়; বরং তাকে লোলুপ দৃষ্টির ছোবল থেকে রক্ষা করা এবং তার পবিত্রতা ও সৌন্দর্যের মানকে সংরক্ষিত করা।

◈ ইসলামি পর্দার মর্যাদা:

হিজাব আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য: পর্দা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আনুগত্য। কেননা তাঁদের আনুগত্য প্রতিটি নর-নারীর উপর ফরয করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কোন আদেশ করলে কোন ইমানদার পুরুষ ও ইমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করার কোন অধিকার নেই। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ অমান্য করবে, সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হবে। (সূরা আহযাব- ৩৬)

❑ আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে পর্দার নির্দেশ দিয়ে এরশাদ করেন:
● “ইমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। তারা যেন সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” [সূরা নূর: ৩১]
● তিনি আরও বলেন, “তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।” [সূরা আহযাব: ৩৩]
● আল্লাহ আরও বলেন, “তোমরা তাঁর পত্নীগণের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” [সূরা আহযাব: ৫৩]
● আল্লাহ আরও বলেন, “হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়।” [সূরা আহযাব: ৫৯]
● রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) বলেন, “নারী গোপন বস্তু।” (তিরমিযী) অর্থাৎ তাকে ঢেকে রাখতে হবে।

◈ হিজাব নারীর পবিত্রতা:

আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে নবী, আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না।” [সূরা আহযাব: ৫] নারী নিজেকে ঢেকে রাখবে। এতে সে পূত-পবিত্রা সংরক্ষিতা থাকবে, আর তবেই তাকে কষ্ট দেয়া হবে না, ফাসেক বা খারাপ লোকেরা তাকে উত্যক্ত করতে সুযোগ পাবে না। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, নারীর সৌন্দর্য অপরের কাছে প্রকাশ হলেই তাকে কষ্ট, ফিতনা ও অকল্যাণের সম্মুখীন হতে হয়।

◈ হিজাব নির্মলতা:

আল্লাহ বলেন, “তোমরা তাঁর পত্নীগণের নিকট থেকে কোন কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” (সূরা আহযাব- ৫৩)

এ আয়াতে পর্দাকে মুমিন নারী-পুরুষের হৃদয়ের পবিত্রতার কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা চক্ষু যখন অবলোকন করে; হৃদয় তখন কামনা করে। আর এজন্যই দৃষ্টিপাত না করাটা হৃদয়ের পরিশুদ্ধতার কারণ এবং ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার সুস্পষ্ট মাধ্যম। কেননা পর্দার মাধ্যমে দুর্বল অন্তরের মানুষদের কু প্রবৃত্তিকে বিনষ্ট করে দেয়া হয়। আর নারী যেন পরপুরুষের সাথে নম্র ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা না বলে। এতে দুর্বল হৃদয়ের লোকদের অন্তরে লালচ (কুবাসনা) সৃষ্টি হবে। (সূরা আহযাব- ৩২)

◈ হিজাব নারীর আবরণ:

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ লজ্জাশীল গোপনকারী। তিনি লজ্জা ও গোপনীয়তা পসন্দ করেন।” তিনি আরও বলেন, “যে নারীই নিজ গৃহ ব্যতীত অন্যের গৃহে গিয়ে স্বীয় পোষক খুলবে; আল্লাহ তার থেকে পর্দা ছিঁড়ে ফেলবেন।”

◈ পর্দা হল ঈমান:

আল্লাহ তাআলা ইমানদার নারী ব্যতীত কাউকে পর্দার নির্দেশ দেন নি। এজন্যই তিনি বলেছেন, আপনি মুমিন নারীদেরকে বলুন!…।

একদা বনী তামীম গোত্রের কতিপয় নারী উম্মুল মুমেনীন আয়েশা রা. এর নিকট আগমন করে, তাদের পরিধানে ছিল পাতলা পোশাক। তিনি বললেন, “তোমরা যদি মুমেনা হয়ে থাক, তবে এটা ইমানদার নারীর পোশাক নয়। আর যদি ইমানদার না হয়ে থাক, তবে এ পোশাক দ্বারা উপকৃত হতে পারবে।”

◈ পর্দা আত্মসম্ভ্রম:

আত্মসম্ভ্রম বোধ সম্পন্ন পুরুষের জন্যও পর্দা মানানসই, যে পুরুষ নিজ স্ত্রী ও কন্যাদের প্রতি পর দৃষ্টির লোলুপতায় মর্যাদাবোধে আঘাত প্রাপ্ত হয়। জাহেলি যুগে এবং ইসলামের মধ্যেও অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে নারীর মর্যাদা ও সম্ভ্রম রক্ষার জন্য। হযরত আলী রা. বলেন, আমি শুনলাম তোমাদের নারীরা অনারব কাফের পুরুষদের সাথে বাজারে গিয়ে ভিড় জমায়? তোমাদের মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেই? যার মধ্যে আত্মসম্ভ্রম বোধ নেই, তার মধ্যে কোন কল্যাণ নেই।

Related Posts

সুন্নতি পোশাক
Sunnah Fashion

নও মুসলিম নারীর দৃষ্টিতে হিজাব

খাওলা নাম্নী একজন জাপানী নারী, যিনি ফ্রান্সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি পর্দার গুরুত্ব, এর মাধ্যমে অর্জিত ব্যক্তিগত শোভা ও সম্মান, এবং মুক্ত পোশাকের ক্ষতিকারক প্রভাবগুলির ওপর আলোচনা করেন। তাঁর বক্তব্যে

Read More
পোশাক নীতি
Sunnah Fashion

পর্দা হীনতার বিপদ

পর্দাহীনতার বিপদ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফারমানি, অভিশাপ, জাহান্নামিদের কাজ, ইবলিসের সুন্নত, ইহুদী নীতি, জাহেলি রীতি ও চারিত্রিক পদস্খলনের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। বেপর্দার

Read More